পেনাং দ্বীপ |
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স যেমন বন জঙ্গল কেটে আমাদের কক্সবাজারকে বাসযোগ্য করেছেন, ১৭৮৬ সালে একই কোম্পানির ক্যাপ্টেন ফ্রান্সিস লাইট একই ভাবে বাসযোগ্য করেছেন মালাক্কা প্রণালীর এই ট্রপিক্যাল আইল্যান্ডকে। প্রিয় বন্ধুরা আজ আপনাদের সাথে আছি মালেশিয়ার পেনাং দ্বীপ এ। কুয়ালালামপুরের ৩৫০ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে সাগরভাসা এই পেনাং দ্বীপ। দ্বীপের উত্তর সীমানায় ভ্রমন পিয়াসীদের জন্য আছে আকর্ষনীয় বীচ। বীচ ত নয় যেনো প্লে-গ্রাউন্ড ছোট বড় সবার। কারো পচন্দ তুমুল গতির স্পীডবোট আবার কারো পচন্দ আকাশে উড়ে বেড়ানোর জন্য প্যারাসূট। নিচে স্পীডবোট ধেয়ে চলে উপরে থাকা প্যারাসূট নিয়ে। প্যারাসূট যেন উড়ে বেড়ানো ঘুড়ি আর স্পীডবোট যেন তার নাটাই। এভাবে প্যারাসূট এ করে আপনিও উড়ে দেখতে পারেন পেনাং দ্বীপ।
বীচ থেকে ১৫ কিলোমিটার দুরে পেনাং এর রাজধানী শহর এই জর্জ টাউন। অট্টালিকায় ঠাসা এই শহর ১৮০০ সালের আগে ছিল ম্যালেরিয়াবাহী মশায় ভরা গহীন এক জঙ্গল। সেই জঙ্গল কেটে সাফ করার কাজ এটতাই কঠিন ছিল যে ক্যাপ্টেন ফ্রান্সিস লাইট নাকি জাহাজের কামানে রৌপ্য মুদ্রা ভরে জঙ্গলে নিক্ষেপ করতেন শ্রমিকদের উৎসাহিত করার জন্য। ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ এর আওয়তাধীন ১২১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই বড় শহর এখন এশিয়া একটি অন্যতম ভ্রমনের স্থান। ১৮৯৭ সালের রানী ভিক্টোরিয়া রাজ্য শাসনের ৬০ বছর পূর্তিতে তৈরি করা হয়েছিল ৬০ ফুট লম্বা ক্লক টাওয়ার, যা শহরের সৌন্দর্য্যকে দ্বিগুন করে তোলে।
বৃটিশ আমলে ভারতবর্ষ থেকে আনা হয়েছিল নীল গাছের রং। সে রং এ নীল হয়ে এই বাড়ি, কথা বলছি এখানকার বিখ্যাত একটি বাড়ি নিয়ে। শুধু রং এ নয়, নজরকাড়া স্থাপত্যশৈলীও সবার নজরকাড়বে। বাড়িটিতে রয়ছে ৩৮ টি কক্ষ ও ২২০ টি জানালা। ৫৬ হাজার বর্গফুটের এই ম্যানশন বিশ্বসেরা ১০ ম্যানশনের একটি। পেনাং হিল এর নাম শুনেছি অনেক, যাচ্ছি এখন সেখানে। আগে মানুষ যেত ঘোড়া বা পালকিতে চড়ে আমরা যাচ্ছি ট্রেনে। যেতে হয় অনেক চড়াই উতরায়ের আর টানেল এর মধ্য দিয়ে, জার্নিটা নাকি অনেক মজার। এই ট্রেন গুলা ছোট অনেকটা বাস এর মত। যাত্রী ধারন ক্ষমতা ৭০ থেকে ৮০ জনের মত। ট্রেনের এই লাইনটি দৈর্ঘ্য প্রয় ২ কিলোমিটার।
প্রায় ৫০ শতাংশ খাড়া লাইনে জুরাসিক যুগের গাছপালায় ঢাকা পাহাড়ের গা বেয়ে সেকেন্ডে প্রায় দেড় মিটার গতিতে একটা ট্রেন উপরে উঠে আরেকটা ট্রেন নিচের দিকে নামে। ঢুকতে যাচ্ছি টানেলে, ৩৫ ফুট খাড়া ও ২৫৮ ফুট দীর্ঘ এই টানেল বিশ্বের সবচেয়ে খাড়া টানেল। চড়াই উতরায় আর টানেল পেরিয়ে প্রায় ২২৫০ ফুট উপরে কাঙ্খিত রেলস্টেশান। পেনাং এর সর্বোচ্ছ এই পাহাড় চুড়া জর্জ টাউন থেকে ৬ কিলোমিটার দুরে। এই চুড়া সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৭৫০ ফুট উঁচুতে, শরীর তাই জুড়িয়ে যায ঠান্ডা হাওয়ায়। পাহাড়টি হচ্ছে মুলত ওয়াচ টাওয়ার, পেনাং হিল থেকে তাই দেখা য়ায় কাছের জর্জ টাউন,পূর্ব উপকূল, আর দূরের মিনল্যান্ড। মালাক্কা প্রনালী পাড়ের এই পাহাড়ি এলাকায় গড় তাপমাত্রা জর্জ টাউনের থেকে ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস কম।
ক্যাপ্টেন ফ্রান্সিস লাইটের উত্তরসূরীরা তাই শহরের তাপদাহ থেকে বাঁচতে এখানে গড়ে তুলেছিলেন গ্রীষ্মকালীন নিবাস। এখানে এলে জানবেন ভারতের নয় মালেশিয়ার এই হিল স্টেশানটি ব্রিটিশ সম্রাজ্যের সর্বপ্রথম হিল স্টেশান। পেনাং হিল এর অন্যতম আকর্ষন বিশ্বের দীর্ঘতম ছয় সাপ প্রজাতির একটি পাইথন। জীব বৈচিত্রে ভরা এই হিল স্টেশান নানা আয়োজনে মন ভরায়পর্যটকদের। চীও জেটি, পেনাং এর ৮ টি প্লানচিটের মাঝে এটি অন্যতম, সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে সেরা। দেখে বুঝার উপায় নেই যে এইট একটি জেলে পল্লী। ৭৫ ঘর জেলের এই গ্রামটা পুরোটায়
পানির উপরে। মধ্য উনিশ শতকে ফুজিয়ান প্রদেশ থেকে আসা চীও গোত্রের চীনারা ১৯১৮ সালে এই জেলে পল্লী গড়েছে আপন জীবন সংস্কৃতির ঐতিহ্যে। উত্তর প্রজন্মের কেউ কেউ একই সাথে জেলে কেউ দোকানি। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের স্বিকৃতি পাওয়া এই জেলে পল্লী দেখেতে আসেন প্রচুর পর্যটক। সখ্য গড়েন জেলে জীবনের সাথে।
0 Comments