পেনাং হিল |
তিনশ চার মিটার লম্বা কাঠের পাটাতনে চীনা স্থাপত্যশৈলীর রো হাউজগুলো সারি সারি পিলারের উপর দাঁড়িয়ে। চীও জেটির এই জেলে পল্লী আপনার মন ভরাবে জলে ভাসা জেলে জীবনের স্নিগ্ধতায়। সবচেয়ে রঙ্গিন পাখা কার অবিশ্যই প্রজাপতির, সেই প্রজাপতির বহুরঙ্গা রঙ্গে মন রাঙ্গাতে আমরা চলে এসেছি পেনাং এর বাটারফ্লাই ফার্মে। প্রজাপতিকে মালেশিয়ানরা বলে রামারামা। প্রজাপতির জীবন চক্রে চারটি ধাপ। প্রজাপতি বান্ধব বৃক্ষ, গুল্মে সুন্দরভাবে সাজানো এই বাটারফ্লাই ফার্ম। ফার্মের পদ্মপুকুরে দেখা মেলে সত্যিকারের ব্যঙ।
হরেক প্রানীর মিশেলে ১ হেক্টর এলাকজুড়ে এই ফার্মে ৫০ প্রজাতির ও প্রায় হাজার চারেক প্রজাপতির নিত্য উড়াউড়ি এই ফার্মে। এখানে রয়েছে টেম্পল কমপ্লেক্সের সবচেয়ে সুন্দর প্যাগোডা। চীনা স্থাপত্যশৈলীর ভিত্তিভূমি থেকে শুরু করে ১০ হাজার বৌদ্ধ মুর্তি ঠাঁই পেয়েছে এই সাত তলার প্যাগোডায়। প্যাগোডায় শীর্ষ ভাগটি বার্মিজ ডিজাইনে তৈরি, মধ্যভাগে থাই স্থাপত্যশৈলীর শোভা। নজরকাড়া সুন্দর সুন্দর অনেকগুলা টেম্পল এই টেম্পল কমপ্লেক্সে। নির্মানশৈলী, অলংকরন কিংবা ধর্মাচার সবকিছুতেই মহাজান বুদ্ধ মতাদর্শ চীনা ঐতিহ্যের চমৎকার মিশেল।
পেনাং টেম্পল |
পেনাং এর উত্তরপূর্ব উপকূলের স্বাগত জানায় পোর্ট কর্নওয়ালিস। ঠিক এখানে ১৭৮৬ সালে ১১ আগষ্ট ক্যাপ্টেন ফ্রান্সিস লাইট সদলবলে এসে দখল করেছিলেন পেনাং দ্বীপ। পরে ফরাসিদের আক্রমন ঠেকানোর জন্য এখানেই গড়ে তুলেছিলেন দূর্গ। দূর্গের নাম রেখেছিলেন চালর্স মারকুইস কর্নওয়ালিসের নামে। নামটা হয়ত অনেকেরই চেনা, ঠিকই ধরেছেন আমাদের গভর্ণর অব বেঙ্গল এই লর্ড কর্নওয়ালিস। একটু সামনে এগুলে দেখা যাবে আমেরিকান চ্যাপেল নামে আর একটি যায়গা। ধর্মপ্রান ফ্রান্সিস লাইটের গড়া। ভিতরের গ্যালারীতে ইতিহাসের মৌনতা। জলদস্যূ ও বহিঃশত্রুর আক্রমন ঠেকানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফ্রান্সিস লাইট এখানে এসেছিলিনে বানিজ্যের জন্য। সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে একসময় যুদ্ধ বাঁধে মালিকের সাথে। পরাজিত সুলতান বার্ষিক ৬ হজার স্প্যানিশ ডলারের বিনিময়ে মেনে নিতে বাধ্য হন ইংরেজদের বস্যতা। ৩ লাখ ৩৩ হাজার বর্গফুটের এই দুর্গে কামান আছে অনেকগুলো। বেশিরভাগেই জলদস্যুদের কাছ থেকে দখল করা।
মালেশিয়ার সবচেয়ে ভালভাবে টিকে থাকা সবচেয়ে বড় এই দূর্গে সবচেয়ে নামকরা কামানটির নাম সেরিরামবাই। বয়স ৪১৮ বছর। জনশ্রুতি আছে ব্রোঞ্জের অলংকৃত এই কামানে ফুল দিলে নাকি ইচ্ছা পুরন হয় নিঃসন্তান দম্পতিদের। আলো আধারির মায়াবী জাদুতে রাতের পেনাং দারুন মোহিনী। এখানকার পরিবেশটা যেমন উপভোগ্য খাবারও তেমনি সুস্বাদু খুব। আপনার পেনাং বেড়ানোটা অসম্পূর্ন থেকে যাবে যদি পা না পড়ে হকার্স স্টল নামের এই প্লেসে। খাদ্যপ্রীতি এবং খাদ্য বৈচিত্রে খ্যাতি কুড়ানো পেনাংএ খাবার যেমন সস্তা, রকমফেরও বিস্তর। চীনা মালই, ভারতীয় ওয়েস্টার্ন সব খাবারই পাবেন হকার্স স্টলে।
গরম পানিতে সিদ্ধ করা এখানকার সামুদ্রিক ঝিনুক আরেকটি জনপ্রিয় খাবার। পেনাং সাগরভাসা দ্বীপ হওয়ায় সামুদ্রিক খাবারের অভাব নেই। চিংড়ি, কাঁকড়া, শামুক, ঝিনুক যার যা ইচ্ছা চাইলে পরিবেশিত হয় প্লেটে। সিদ্ধ করা ঝিনুকের খোলস ছাড়িয়ে খেতে হয় সস মাখিয়ে, সিদ্ধ করা এসব ঝিনুক নাকি খুবই মজা। হরেক রকম মজাদার খাবারের জন্য পেনাং কে সবাই বলে মালেশিয়ার ফুড ক্যাপিটাল। রাতের পেনাং এর আরেক আকর্ষন পাসারমালাম। পাসারমালাম এর অর্থ হল নাইট মার্কেট। পেনাং এ কেনাকাটা করাটা এতই ইটারেস্টিং সবাই কেনাকাটা করতে খুব পচন্দ করে। নিজের জন্য এবং প্রিয়জনকে উপহার দেওয়ার জন্য পচন্দমত সব জিনিসই পাবেন এই নাইট মার্কেটে। সময়করে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন পেনাং এর আইল্যান্ডে।
0 Comments