মেঘেররাজ্য সাজেকভ্যালি

সাজেকভ্যালি

প্রিয় বন্ধুরা আজ আপনাদের নিয়ে আছি মেঘেদের রাজ্যে, ছুটে চলছি পাহাড়টিলা ধরে মেঘের কাছে। হ্যাঁ, ঠিকই ধরছেন, আজ আমাদের গন্তব্য মেঘের রাজ্য সাজেকভ্যালি তে। সাজেক নিয়ে আজকেআমাদের এই আয়োজন। যতদূর চোখ যায় ছোটবড় সবুজ পাহাড়, ভোরের সূর্যদোয়, হাত বাড়ানো দুরত্বে মেঘেদের ভেসে যাওয়া, বিকেলে পাহাড়ের কোলে সূর্যাস্ত কিংবা সন্ধ্যার পর কোটি কোটি তারার মেলা, এতক্ষন যা বলছি এগুলা কল্পনা নয়। এইরকমই প্রকৃতির নানান রূপের দেখা মেলে সাজেকভ্যালিতে। চলুন এক নজরে দেখে নি সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি সাজেকে যাওয়ার উপায়। এছাড়াও কি কি  দেখবেন, কোথায় থাকবেন, কি খাবেন এবং সাজেক ভ্রমনের খুঁটিনাটি সব তথ্য। 

রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলা সাজেক। এটি বাংলাদেশের সবছেয়ে বড় ইউনিয়ন। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সাজকভ্যালির উচ্চতা প্রায় ১৮শ ফুট। সারাবছর ভিবিন্ন সময় সাজেকের থাকে ভিন্ন ভিন্ন রূপ ফলে বছরের যে কোন সময় আপনি ইচ্ছা করলে সাজেক ভ্রমনে আসতে পারেন। তবে এর মধ্যে জুন থেকে নভেম্বর মাসে সাজেকের আকাশে মেঘ বেশি দেখা যায়। তাই পাহাড় এবং মেঘেদের লুকোচুরি খেলা দেখার জন্য এই সময়টা বেশি উপযুক্ত। সাজেকের অবস্থান রাঙ্গামাটি জেলাতে হলেও খাগড়াছড়ি জেলা হয়ে  সাজেকে যাওয়া সবচেয়ে ভাল। আপনি যেখান থেকে যেতে চান না কেন, প্রথমে আপনাকে খাগড়াছড়ি আসতে হবে। সেখান থেকে লোকাল বাহনে দিঘীনালা উপজেলা হয়ে প্রায় ৬৫-৭০ কিলোমিটার  দূরে অবস্থিত সাজেকে যেতে পারবেন। 

সাজেক এর সৌন্দর্য্য

ঢাকা থেকে আসতে হলে আপনাকে গাবতলি,কলাবাগান,কল্যানপুর ও সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে শ্যামলী,এস.আলম,সেন্টমার্টিন পরিবহন,সৌদিয়া,ঈগল, রিলাক্স এসব বাসগুলো সরাসরি খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বিভিন্ন বাস সার্ভিসের ভিবিন্ন রকম ভাড়া। এসি,ননএসি দুইটা সার্ভিসই আপনি পাবেন। আপনাদের সুবিধামত যে কোন একটাতে চেপে আসলেই হবে। ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি যেতে জ্যাম এ না পড়লে ৬ থেকে ৭ ঘন্টা লাগে। ছুটির দিন গুলাতে অগ্রিম টিকেট কেটে রাখাই ভাল। ঢাকা থেকে বাসগুলা রাতে ছাড়ে এবং ভোরবেলা  খাগড়াছড়িতে নামিয়ে দে। 

খাগড়াছড়ির শাপলা চত্বর থেকে চান্দের গাড়ি,জিপ এবং বাইক ভাড়া পাওয়া যায়। এসবে চড়ে আপনি সাজেক যেতে পারবেন। ভারতের মিজোরাম রাজ্যের সীমান্তবর্তী এই  উপর্ত্যকা পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত। পাহাড়ের চুঁড়ায় অবস্থিত সাজেক হল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন। এর আয়তন ৭০২ বর্গমাইল। পহাড়,সবুজ আর মেঘের রাজত্ব সাজেকভ্যালিতে। এখানে পাহাড় নতুনরূপে ধরা দেয়ে চোখে। মেঘেরো দলবেঁধে এসে ছুঁয়ে যায় জনপদ। কখনো কখনো মেঘের আড়ালে হারিয়ে যায় পাহাড়চুড়া। দূরে দৃষ্টি ফেললে দেখা যায় ভারতের মিজোরাম রাজ্যের পাহাড়। এই যেন এক যায়গায় দাঁড়িয়ে পুরো পৃথিবীকে দেখা। পহাড়ের আদিবাসীদের জীবন, আচার ,পোশাক ইত্যাদি নিয়ে হাসি ঠাট্টা থেকে বিরত থাকতে হবে।

পহাড়ের সাথে মেঘের লুকোচুরি

সাজেকভ্যালির পিছনে পাহাড়ের চুড়াই রয়েছে ছোট একটি গ্রাম এবং অল্প কয়েকটি ঘর মাত্র। সুন্দর সাজানো গোছানো গ্রাম চুম্বকের মত টানবে ভ্রমন পিপাসুদের। সাজেকে ঢুকতেই প্রথমে পড়ে রুইলুই পাহাড়। যার উচ্চতা ১৮০০ ফুট। এর প্রবীন জনগোষ্ঠি লুসাই এছাড়াও ত্রিপুরা উপজাতিও বাস করে। সাজেকের শেষ গ্রাম কমলক পাড়া। কমলক পাড়ায় গেলে প্রথমে অবাক হয়ে যেতে পারেন। এখানকার তরুনীরা অনেক আধুনিক।  টি-শার্ট, জিন্স, কেডস পরে তারা দৈনন্দিন কাজ কর্ম করে। এখানকার ঘরগুলাতে সবধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। বিদ্যুৎ এখানে না পৌঁছাতে পারলেও আছে সৌরবিদ্যুৎ। 

রুইলুই এবং কমলক থেকে ভারতের মিজোরাম রাজ্য খুব কাছাকাছি। দুই ঘন্টা হাঁটলে পৌঁছানো যাবে মিজোরামে। সেজন্যে সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা ও পোশাক পরিচ্ছদে আধুনিকতার ছাপ পড়েছে। পাহাড়ের জীবন যাত্রায় তারাই সবচেয়ে উন্নত। সাজেকের সৌন্দর্য্য, নয়নাভিরাম প্রকৃতি, পাহাড়ের সাথে মেঘেদের লুকোচুরি খেলা সব মিলিয়ে এই যেন সুন্দরের স্বর্গরাজ্য। 

Post a Comment

0 Comments