ঘরোয়া পরিবেশে চিকেন বিরিয়ানি রেসিপি

চিকেন বিরিয়ানি পচন্দ করে না এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। বিরিয়ানির কথা শুনলে অনেকেরে জিবে জল চলে আসবে । আজ আমাদের রিসিপি ঐ চিকেন বিরিয়ানি নিয়ে। চলুন শুরু করা যাক। আপনারাও ঝটপট উপকরন নিয়ে বসে যান। অনেক সময় দেখা যায় মসলার কম্বিনেশান এবং রান্নার প্রসেসটা ঠিকঠাক না হওয়ার কারনে চিকেন বিরিয়ানিটা খুব বেশি টেষ্টি হয় না। সুতারাং আজকে আমি আপনাদের দেখাবো কিভাবে খুব টেষ্টি চিকেন বিরিয়ানিটা তৈরির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। চিকেন বিরিয়ানি রান্না করার জন্য সর্বপ্রথম মুরগির মাংস নিয়ে নিলাম ১ কেজি। আমি আজকের রান্নায় ব্রয়লার মুরগী ব্যবহার করছি। এগুলাকে আমি রেগুলার কাট করে কেটে নিয়েছি। আপনারা চাইলে আরও ছোট ছোট পিস করে কেটে নিতে পারেন। মাংসটার উপরে প্রায় ২ টেবিল চামচ ভিনেগার দিয়ে দিচ্ছি। ভিনেগারটাকে চিকেনের সাথে মেখে নিচ্ছি এবং সাথে দিয়ে দিচ্ছি কিছুটা পানি। এই ভিনেগার মিশ্রিত পানিতে চিকেনগুলাকে ১৫/২০ মিনিট  ভিজিয়ে রাখবো। এরপর চিকেনটাকে আমি ভালভোবে ধুয়ে নিলাম। এভাবে ভিনেগার দিয়ে ধুয়ে নেওয়ার কারন হচ্ছে চিকেনে কোন ক্ষতিকর ব্যকটেরিয়া থাকলে তা চলে যাবে। 

চিকেনটাকে একটা বাটিতে নেওয়ার পর প্রথমে দিয়ে দিচ্ছি দেড় টেবিল চা চামচ পরিমান আধা বাটা, রসুন দিয়ে দিচ্ছি দেড় টেবিল চামচ, ১ টেবিল চামচ মরিচের গুড়া, জিরা গুড়া হাফ টেবিল চা চামচ, সাথে দিচ্ছি ধনিয়া গুড়া হাফ টেবিল চামচ, তারপর দিয়ে দিচ্ছি স্বাদমত লবন। আপনারা আপনাদের স্বাদমত লবন বাড়িয়ে বা কমিয়ে দিতে পারেন। সবশেষে দিচ্ছি এককাপের চারভাগের একভাগ টক দই। এবার সব মসলাগুলাকে চিকেনের সাথে ভালভাবে মিশে নিতে হবে। মসলা মাখা চিকেনগুলাকে প্রায় ১ ঘন্টার জন্য নরমাল টেম্পারেচারে রেখে দিবো। তবে আপনারা চাইলে আরও বেশি সময়ের জন্য রেখে দিতে পারেন, কোন সমস্যা হবে না। অন্য দিকে বিরিয়ানিতে এড করার জন্য ৩৫০ থেকে ৪০০ গ্রামেরমত আলু নিয়েছি। আলুতে সামান্য লবন এবং মরিচের গুড়া দিয়ে সামান্য মেখে নিচ্চি। আলুটাকে এবার ফ্রাই করে নেওয়ার পালা, ফ্রাই করার জন্য একটা ফেনে তেল দিয়ে দিচ্ছি প্রায় এক কাপ। তেল গরম হওয়ার পর আলুটাকে দিয়ে দিচ্ছি। আলুটাকে ভালভাবে ভেজে নিতে হবে। কিছুক্ষন রেখে দেওয়ার পর আলুগুলা ভালভাবে ফ্রাই হয়ে যাবে। আলুটাকে ফেন থেকে তুলে নেওয়ার পর একই ফেন এ বিরিয়ানি রান্না করবো। 

ভিনেগার দিয়ে ধুয়ে নেওয়া চিকেন

প্রথমে ফেন এ ওই তেলের উপর দিয়ে দিচ্ছি হাফ কাপ এর মত পেঁয়াজ কুচি,পেঁয়াজটাকে সামান্য বাদামি করে ভেজে নিচ্ছি। ২ টুকরা মিডিয়াম সাইজের দারুচিনি দিয়ে দিচ্ছি, তেজপাতা দিয়ে দিলাম দুইটা। ৮/১০ টারমত দিয়ে  দিচ্ছি এলাচ, লবঙ্গ ৫/৭ টা। এবার সবগুলাকে কিছুক্ষন ভেজে নিতে হবে। এতে করে গরম মসলার ফ্লেভারটা তেলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। এবার চিকেন গুলা দেওয়ার পালা। চিকেনগুলা এড করে দিলাম গরম মসলার উপর, এরপর একটা চামচ দিয়ে একটু নেড়েছেড়ে দিচ্ছি। এখন এই চিকেনের মধ্যে একটি স্পেশাল বিরিয়ানি মসলা দিবো। এই সেই স্পেশাল মসলা তৈরি করার জন্য একটা বাটিতে ১ টি জয়ফল এর অর্ধেক, মিডিয়াম সাইজের এক টুকরা জয়ত্রী, ১ পিস বড় এলাচ, কালো গোলমরিচ হাফ টেবিল চামচ, শাহী জিরা ১ টেবিল চামচ। এবার এই মসলাগুলোকে গুড়ো করে চিকেনের সাথে দিয়ে দিবো। তবে রান্না শুরুতে বা রান্নার আগে আপনারা এই মসলা বানিয়ে রাখতে পারেন, কোন সমস্যা নেই। 

এই মসলা তৈরি করতে আপনাদের যদি ঝামেলা মনে হয়  তাহলে বাজারের যে কোন ব্র্যান্ডের বিরিয়ানি মসলা ব্যবহার করতে পারেন। এবার মসলার সাথে চিকেনগুলাকে ভালভাবে বুনে নিবো। আর আপনারা যদি বাজারের রেডিমেট মসলা দিতে চান তাহলে ২ টেবিল চামচ মসলা দিতে হবে। অনেক সময় রেডিমেট মসলাতে লবন দেওয়া থাকে সুতারাং ঐ ব্যপারটাও আপনারা মাথায় রাখতে হবে। চিকেনে কিছু পানি দিয়ে দিচ্ছি, চিকেনটাকে রান্না করতে যতটুকু পানির প্রয়োজন ততটুকুই দিবেন, সামান্য নেড়েছেড়ে চিকেনটাকে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। চুলার তাপ বেশি দিবেন না, অল্প চাঁচ এ রান্না হলে ভাল হয়। কিছুক্ষন পরপর চিকেনটাকে নেড়েছেড়ে দিতে হবে, আর খেয়াল রাখবেন পানি শুকিয়ে যাতে চিকেনটা ফেন এ লেগে না যায়, পুড়ে না যায়।  ২০/২৫ মিনিট রান্না করার পর চিকেনটা রেডি হয়ে যাবে। এবার ফেন থেকে মসলা এবং তেল ছাড়া শুধু মাংসটাকে একটা বাটিয়ে নিয়ে নিতে হবে। আর এই তেল মসলার মধ্যে বিরিয়ানির যে চাল আছে ওটা আমি এখানে রান্না করবো। আজকে বিরিয়ানি রান্নার জন্য ৩ কাপ পোলাওর চাল নিয়েছি, চিনিগুড়া পোলাওর চাল টা ব্যবহার করছি। তবে অন্য যে কোন পোলাওর চাল দিয়েও আপনারা বিরিয়ানিটা রান্না করতে পারেন। 

মজাদার চিকেন বিরিয়ানি

চালটাকে আমি প্র্রায় আধা ঘন্টা আগে ভালভাবে ধুয়ে একটা পাত্রে রেখে দিয়েছি। এখন এই চালটাকে আমি তেল আর মসলার মধ্যে এড করে দিচ্ছি। তেল আর মসলার মধ্যে চালগুলোকে প্রায় ৩/৪ মিনিট ভেজে নিতে হবে আর এসময়  চুলার হিট মিডিয়াম থাকবে। আপনারা যে পাতিলে বিরিয়ানির মাংসটা রান্না করবেন ঠিক সে পাতিলে বিরিয়ানির চাল টা রান্না করবেন। এতে করে মাংসের যে ফ্লেভারটা সেটা চালের সাথে ভাল করে মিশবে। আর বিরিয়ানিটাও অনেক টেষ্টি হবে। চালটাতে এবার আমি দিয়ে দিচ্ছি প্রায় ৬ কাপের মত গরম পানি। যে পরিমান চাল আপনারা ব্যবহার করবেন তার ঠিক দ্বিগুন পরিমান পানি দিতে হবে। তবে চালের পরিমান যদি ১ কেজির বেশি হয় তাহলে দ্বিগুনের পারিবর্তে দেড়গুন পানি ব্যবহার করবেন। স্বাদমত লবন দিয়ে দিচ্ছি তারপর চালটাকে নেড়েছেড়ে লবনটা মিশিয়ে নিতে হবে। চালটাকে ঢেকে দিচ্ছি,চুলার মিডিয়াম চাঁচ এ চালগুলা রান্না করবো যতক্ষন পর্যন্তনা চালের জলগুলা শুকিয়ে আসে। এভাবে ৮/১০ মিনিট পর চালের পানিটা শুকিয়ে যাবে। চালটাকে সামান্য নেড়েছেড়ে  দিতে হবে। এতে করে সবগুলা চাল সমানভাবে রান্না হবে। আবারও কিছুক্ষন ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিয়ে পানিটা পুরোপুরি শুকিয়ে নিতে হবে।  শুকানোর পর এখানে আমি ভেজে রাখা আলু এবং মাংসটাকে দিয়ে দিচ্ছি।

চিকেন বিরিয়ানিটা আরও বেশি টেষ্টি করতে আমি আরও কিছু এড করে দিচ্ছি। ২ টেবিল চামচ করে কিসমিস, কাজু বাদাম, পেঁয়াজের বেরেস্তা, ৬/৭ টার মত নিয়ে নিয়েছে আলু বকরা। গুড়ো দুধ নিয়েছি ১ টেবিল চামচ আর ১ টেবিল চামচ চিনি, এবার সব উপকরনকে একসাথে মিক্স করে নিতে হবে এবং বিরিয়ানিতে এড করে নিচ্ছি। ৮/১০ টা কাঁচা মরিচ দিয়ে দিচ্ছি, ঘি দিয়ে দিচ্ছি ২ টেবিল চামচ, এতে বিরিয়ানিতে একটা স্বাদমত ফ্লেভার আসবে। গোলাপজল দিয়ে দিচ্ছি ১ টেবিল চামচ। এবার সবকিছুকে আবারও সামান্য মিশিয়ে নিচ্ছি। এবার ঢাকনা দিয়ে ভালভাবে ঢেকে চুলাকে একদম লো করে দিয়ে ১০/১৫ মিনিটের জন্য রেখে দিচ্ছি। প্রায় ১৫ মিনিট পরে চালটাকে একটু নেড়ে দিচ্ছি যাতে করে রান্নাটা ভালভাবে হয়। রান্না প্রায় শেষ চুলা অফ করে দিয়ে ওভাবে  আবার ১৫/২০ মিনিট রেখে দিবেন। এরপর দেখবেন আপনার মজাদার চিকেন বিরিয়ানি রান্না কমপ্লিট এবয় সার্ভ এর জন্য প্রস্তুত। বন্ধুরা এই রেসিপি ফলো করে খুব সহজে আপনারা চিকেন বিরিয়ানি তৈরি করতে পারবেন।



Post a Comment

0 Comments