ভুটানের পথে পথে: ফুন্টশলিং থেকে থিম্পু (পার্ট-১)

ভুটান

অভিযানের আজকের গন্তব্য আমাদের প্রাকৃতিক আর পাহাড়ি নৈস্বর্গের লীলাভুমি ভুটানে। বাংলাদেশের বুড়িমারি হয়ে পশ্চিমবঙ্গের চেংরাবান্দা তারপর অনেকটা পথ পেরিয়ে জয়গাঁও বর্ডার দিয়ে অবশেষে ভুটানে। প্রিয় বন্ধুরা স্বাগত জানাচ্ছি ভুটানের দক্ষিনা দুয়ার ফ্রন্টিয়ার টাউন ফুন্টশলিং এ। ভিন্ন ধরনের ঘরবাড়ি ভিন্ন ধরনের বাসিন্দা, মনে হবে এক ভিন্ন ভুবনে আছি আমরা। ভুটানের বেশিরভাগ বাসিন্দা সিদ্ধার্থ গৌতমবুদ্ধের অনুসারী। প্রান্তিক বর্ডার টাউন হলেও সড়ক পথে ভুটানে ঢুকার প্রধান প্রবেশদার হওয়ায় ফুন্টশলিং এখন দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। ১৯৫০ সালের দিকেও ফুন্টশলিংকে লোকে বলতো হাতিরদারা বা এলিফ্যান্টশিল। বুনো হাতি নাকি দাপিয়ে বেড়াতো নগর গড়ে উঠার আগে। 

বাংলাদেশের চট্টগ্রামের মতই ফুন্টশলিং ভুটানের বানিজ্যিক রাজধানী। ২৪ হাজার বাসিন্দা অধ্যুষিত এই নগরে ভুটানের প্রায় এক তৃতীয়াংশ যানবাহনের চলাচল। বানিজ্যিক রাজধানী ফুন্টশলিং এর অন্যতম রপ্তানি পণ্য কমলালেবু। এই কমলালেবু রপ্তানি হয় ভারত এবং বাংলাদেশে। ফুন্টশলিং এর আড়ৎ থেকে ভারতে কমলালেবু যায় অল্প,বাংলাদেশেই যায় প্রায় ৯০ ভাগ। বিশ্বজুড়ে খ্যাতি পাওয়া রসালো এই ফলের আদি নিবাস কিন্তু দক্ষিন পূর্ব এশিয়াতে। ফুন্টশলিং এর আড়ৎগুলাতে কমলালেবু আসে ভুটানের পাহাড়ি জনপদ থেকে। রাসায়নিক সার এবং প্রিজারবেটিব ব্যবহারে ভুটান সরকারের কড়াকড়ি নিষেধাজ্ঞার কারনে এই কমলালেবু একদমই দূষনমুক্ত। 

সতেজ কমলালেবু

ঢাকা থেকে আসা কিছু ফল ব্যবসায়ী জানান ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি কমলালেবুর সিজনে ৪০ থেকে ৫০ ট্রাক কমলালেবু প্রতিদিন চালান হয় বাংলাদেশে। গাছ থেকে কমলালেবু সংগ্রহ করার পর ঠিকঠাক মত বাক্সবন্দি করলে কমলালেবু স্বাভবিক তাপমাত্রায় সতেজ থাকে এক সাপ্তাহের মত। বাংলার প্লাবনভূমি আর হিমালয়ের  পাদদেশ এই দুইয়ের মিলন ভূমি ফুন্টশলিং। উজানের রসালো কমলা ভাটির বাংলাদেশকে বেঁধেছে রসনার বাঁধনে। এবার আমরা যাত্রা শুরু করলাম ভুটানের রাজধানী থিম্পুর দিকে। আঁকাবাঁকা পাহাড়িরাস্তা ধরে এগিয়ে চলতেছি আমরা। ফুন্টশলিং শহর ছেড়ে ৫ কিলোমিটার সামনে এগুলে জঙ্গল চোখে পড়বে। এর পর ২০/২৫ কিলোমিটার এগুলে দেখা মিলবে ঘনকুয়াশ। দেখা যায়না কিছুই। 

দিনের বেলাতেও যেন রাতের আঁধার। ঝোপঝাড়ের বিপজ্জনক বাঁকে পথ হারালে অনিবার্য পতন এবং সাড়ে ৬ হাজার ফুট গহীন খাদে। ঝোঁপঝাড়ে ঘেরা এলাকাটা একেবারে অন্যরকম, চারদিক ঘন কুয়াশায় ঘেরা সাথে কনকনে ঠান্ডার দাপট আর থেমে থেমে বাতাসের লুকোচুরি। এখানে এলে পেয়ে যাবেন এ্যাডবেঞ্চারের মজা। রাস্তার একপাশে উঁচু উঁচু পাথরের পাহাড় আর অন্য পাশে গভীর খাদ।  বর্ষাতেও নাকি এখান থেকে পাথর ধসে পড়ে তাই সাবধান। ঘনকুয়াশা, বিপজ্জনক বাঁক আর দুর্গম পাহাড় যেতে যেতে সবারই চোখে পড়বে। এখান থেকে চার কিলোমিটার সামনে পেয়ে যাবেন পাহাড়ি এই জনপদে জনবসতির দেখা। ফুন্টশলিং থেকে থিম্পু যাওয়ার পথে সবারই এসব বাহারি জনবসতি নজর কাড়বে। 

আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা

ফুন্টশলিং শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে একটি নামকরা যায়গা, নাম গেধু। থিম্পু শহর এখনো ১৪৭ কিলোমিটার দূরে। গেধু শহরের সব বাড়িই ভুটানের স্থাপত্যশৈলীতে গড়া, দারুন দর্শনীয়। ফুন্টশলিং থেকে থিম্পু যাওয়ার এই মহাসড়কটি তৈরি হয়েছিল বিখ্যাত দানতাক  প্রকল্পের অধীনে। দানতাকের বানানো পথে চলতে চলতে যদি ক্ষুধা লেগে যায় পেট পুরে খেতে পারেন দানতাক ক্যান্টিনে। ভূ-প্রকৃতি আর জীবনধারা মত বৈচিত্র আপনি পাবেন ভুটানের খাবারেও। ভাত, সবজি আর মাংসটায় বেশি খায় ভুটানিরা। সবচেয়ে বেশি খায় মরিচের ঝাল। (চলবে..)

Post a Comment

0 Comments