থিম্পু নগরী |
পাহাড়ের সৌন্দর্য্য দেখতে থুম্পু যেতে যেতে আপনি না নেমে পারবেন না। কত সুন্দর দৃশ্য সারি সারি পাহাড়। সাড়ে ৬ হাজার থেকে শুরু করে সাড়ে ১২ হাজার উঁচু উচু পাহাড় শুয়ে আছে যেন আকাশে হেলান দিয়ে। চড়াই উৎরায়ে বনবনানির সবুজ গালিচা আর দেখা মিলবে ছোট বড় কিছু ঝর্ণার অপরূপ দৃশ্য। রুক্ষ, কঠিন আর পাথরে পাহাড়ে জলপ্রপাত যেন উচ্ছল প্রাণের ধারা। জলপ্রপাত যদি পাহাড়ের কান্না হয় এখানকার পাহাড়গুলা তাহলে কাঁদুনে বুড়ি। ফুন্টশলিং থেকে থিম্পু যাওয়ার পথটায় এমন জলপ্রপাত পাওয়া যাবে অগনিত।
বর্ষার সময় পুরো পথটায় নাকি হয়ে উঠে জলপ্রপাত সরণী। গাড়ি চলার জন্য যেমন রাস্তা লাগে তেমনি নদীর লাগে নদীতল, নদীহোক কিংবা স্রোতস্বেনী হঠাৎ যখন হারায় চলার পথ মধ্যাকর্ষণের টানে জলেরধারা পড়তে থাকে নিচে। তখনই তার নাম হয় জলপ্রপাত। ৫০ বছর আগে সারা বিশ্ব থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন ছিল ভুটান। দুর্গম পাহাড়ে হাঁটা পথই ছিল একমাত্র উপায়। ফুন্টশলিং থেকে থিম্পু পর্যন্ত যেতে সময় লাগতো প্রায় ৬ দিন আর এখন মাত্র ৬ ঘন্টা। কৃতিত্বটা অবিশ্যই পাহাড়ি এই রাস্তার। রাস্তা তো নয় যেন পাহাড়ের গা বেয়ে উঠা বড় কোন অজগর। চলার পথে পথে অসংখ্য বাঁক। ১৯৬০ সালের আগে যাতায়তের
জন্য রাস্তা ছিল না বললেই চলে। যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সর্বচ্ছো গুরুত্ব দিতে ভুটান সরকার প্রায় ৫ হাজার কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করেছে পুরো ভুটান জুড়ে। প্রথম ৫ বছরের জাতীয় বাজেটের ৫৯% ব্যয় করেছে রাস্তা নির্মাণে। যেখানে পথ ছিল না সেখানে পথ তৈরি করা হয়েছে পাহাড় ধসে। রাস্তার পাশে এসব পাহাড় বুকে ধরে আছে বহু শ্রম,বহু অর্থ, বহু প্রাণের বিনিময়ে এই রাস্তা গড়ার স্মৃতি। এখানকার গাড়ি চালকরা একেতো দক্ষ তারউপর নিয়ম মেনে গাড়ি চালান। তাই আঁকাবাঁকা ভুটানি রাস্তায় চলতে গিয়ে ভয় পাবেন না মোটেও। চলার পথে কিছুটা রোমাঞ্চ না থাকলে কি চলে!
উঁচুনিচু পাহাড় |
পাথর যে কত বড় হতে পারে এখানে আসলে বুঝবেন। অবশেষে চলে এসেছি আমরা থিম্পুর কাছাকাছি। বর্ডার, বিপজ্জনক বাঁক, ঘনকুয়াশার চাদার, হিলটাউন, জলপ্রপাত, পাহাড়ি নদী সবকিছুর দেখা মিলবে ফুন্টশলিং থেকে থিম্পুর পথে পথে। পার্বত্য ভুটানে হোটেল মোটেলের সংখ্যা চাহিদার তুলনায় খুব বেশি নয়। ঝামেলা এড়াতে এখানে আসার আগেই হোটেল বুকিং দেওয়া ভাল। আর নিশ্চিন্তে উপভোগ করতে পারবেন ফুন্টশলিং থেকে থিম্পুর অপার সৌন্দর্য্য। (শষ)
0 Comments